উপলব্ধি..
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
চেতনা-মানবিকতা-অনুভব-উপলব্ধি সব কিছুই নতুন করে নতুন রূপে ধরা দিয়েছে আমাদের কাছে এই বছরে। শুরুটা হয়তো ঠিক এমনটা ছিল না, শেষটা কেমন হবে তাও জানা নেই। পায়ে পায়ে পেরিয়ে এলাম দশ মাস- আর বাকি দুই। মনে বড়ো আশা, বিশেই শেষ হবে বিষ।
মহামায়া আসছেন- আবার নতুন করে মনটাকে মায়ায় জড়িয়ে নিতে। সবটাই মায়া- তাই বোধহয় সহজেই ভোলা যায়। কিন্তু সত্যিই কি ভোলা যায়? না কি স্মৃতির আবরণে সাময়িক বিস্মরণ।
ভুলে যাবো কি? সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সব বন্ধ রাখতে হবে। মানুষের জন্য মানুষকে দূরে থাকতে হবে। একরাশ দুশ্চিন্তা আর ভয় নিয়ে দিনরাত কেটেছে, কাটছে। স্কুল, কলেজ, অফিস সব বাড়িতেই- ‘অনলাইন ক্লাস’, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সব নতুন ব্যবস্থা, নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে জীবন সচল রাখতে। পরিসংখ্যান যাই বলুক- সমস্ত ক্ষয়-ক্ষতি স্বীকার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা চলছে। সফলতা? জানা নেই। ব্যাতিক্রম শুধু, জরুরী পরিষেবা। জরুরী পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সুস্থ রাখার অসম যুদ্ধে সংগ্ৰাম করে যাচ্ছেন। তাঁদের জীবন, ছুটি, পরিবার, হাসি, আহ্লাদ, আনন্দ সব পরিষেবার চড়া মূল্যে বন্ধক। কবে ফেরত? কতজনের ফেরত হিসেব হবে? হবে হয়তো আরো একটি নতুন পরিসংখ্যান।
সংক্রমণ এড়াতে বন্ধ সব ধর্মের দেবালয়ের দ্বার। অতন্দ্র প্রহরায় খোলা শুধু মানব সেবা-মন্দির (হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র)। সেখানে দেব-দেবীরা নিরলস সেবা দিয়ে চলেছেন। এই মন্দিরে দেবতা সেবা নেন না- আতুর জনেরা সেবা প্রাপ্তির পর করজোড়ে চোখের জলে এখানে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। পরম শ্রদ্ধায়, বিশ্বাসে, ভরসায়। দেব-দেবী বড়ো প্রাণময়, সচল এখানে- সেবা ধর্ম একটি মাত্র ধর্ম। বড়ো পবিত্র স্থান।
পাথর, ধাতুর মুর্তির দেবালয় নির্মাণে তহবিল গঠন হয়- ভীষণ বিলাসীতায়, দরাজ হৃদয়ে, উদাত্ত ঘোষণায় উদ্বোধন হয়, কোনো অভাব, কার্পণ্য সেখানে নেই। অথচ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তহবিল গঠনে সময়ের চাকা ঘুরে যায়, লাল ফিতের বাঁধনে। অতিমারীও কি চেনাতে পারবে আসল মন্দির-প্রকৃত দেবতা! কে জানে আমরা কবে বুঝবো! আদৌ কি বুঝবো? রাজনীতি…
মৃৎময়ীর বন্দনায় মেতে ওঠার আগে একবার কি ভাববো না মানুষরূপী ভগবানের কথা। আমাদের সচেতনতা হয়তো ওনাদের একটু স্বস্তি, একটু বিশ্রাম দিতে পারে। বাকি? জানা নেই.. শুধু ভয় আছে একরাশ।
সকল স্বজন সাথী সাহিত্যিক, পাঠক বন্ধুদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা পথ চলার সাথী হওয়ার জন্য।
শারদীয়ার অগ্ৰিম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।
অনবদ্য বাস্তব যুক্তিগ্রাহ্য প্রতিবেদন।
ধন্যবাদ